রিসালাত কাকে বলে? এবং রিসালাত কী?

 রিসালাত কাকে বলে? এবং রিসালাত কী?

রিসালাত কাকে বলে? এবং রিসালাত কী?
রিসালাত কাকে বলে? এবং রিসালাত কী?

পরিচয়

রিসালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ বার্তা, চিঠি পৌছানো, পয়গাম, সংবাদ বা কোনো ভালো কাজের দায়িত্ব বহন করা । ইসলামি পরিভাষায়, মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী মানুষের নিকট পৌছে দেওয়ার দায়িত্বকে রিসালাত বলা হয় । আর যিনি এ দায়িত্ব পালন করেন তাঁকে বলা হয় রাসুল । রাসুল শব্দের বহুবচন রুসুল ।

রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব

ইসলামি জীবনদর্শনে রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য । তাওহিদে বিশ্বাসের সাথে সাথে প্রত্যেক মুমিন ও মুসলিমকেই রিসালাতে বিশ্বাস করতে হয় । ইসলামের মূলবাণী কালিমা তায়্যিবাতে এ বিষয়টি

 

 

সুন্দরভাবে বিবৃত হয়েছে । এ কালিমার প্রথমাংশ  (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; অর্থ- আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই) দ্বারা তাওহিদের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর সাথে সাথে দ্বিতীয়াংশ (মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ অর্থ- মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল) দ্বারা রিসালাতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে । সুতরাং তাওহিদে বিশ্বাস স্থাপনের ন্যায় রিসালাতেও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে ।

বস্তুত রিসালাতে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন হতে পারে না । কেননা মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ । এ স্বল্প জ্ঞান দ্বারা অনন্ত, অসীম আল্লাহ তায়ালার পূর্ণ পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয় । তাই নবি-রাসুলগণ মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরেছেন । তাঁর পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা ও গুণাবলির বর্ণনা প্রদান করেছেন । তাঁরা ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত জীবনবিধান ও দিকনির্দেশনা নিয়ে এসেছেন। হযরত মুহাম্মদ (স.) না আসলে নবি ও রাসুল সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতে পারতাম না। এমনকি আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও সিফাতের পরিচয়ও লাভ করতে পারতাম না । মূলত নবি-রাসুলগণের আনীত বাণী ও বর্ণনার ফলেই মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং নবি-রাসুলগণের এ সমস্ত সংবাদ বা রিসালাতকে বিশ্বাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, রিসালাতকে অস্বীকার করলে মহান আল্লাহকেই প্রকারান্তরে অস্বীকার করা হয় । অতএব, মানবজীবনে রিসালাতে বিশ্বাস করা ইমানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে নির্ধারিত ।

নবি-রাসুল প্রেরণের উদ্দেশ্য

আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য-অগণিত নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন । তাঁদের উদ্দেশ্যহীনভাবে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়নি বরং তাঁরা নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন । নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁদের বেশ কিছু কাজ করতে হতো । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতিপয় কাজ হলো-

তাঁরা মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরতেন । অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার জাত-সিফাত, ক্ষমতা, নিয়ামত ইত্যাদি বিষয়ের কথা মানুষের নিকট প্রকাশ করতেন ।

সত্য ও সুন্দর জীবনের দিকে আহবান জানাতেন ।

আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও ধর্মীয় নানা বিধি-বিধান শিক্ষা দিতেন ।

পরকাল সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতেন ।

পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধান বাস্তবায়নের জন্য হাতে-কলমে শিক্ষা দিতেন ।

নবি-রাসুলগণের গুণাবলি

নবি-রাসুলগণ ছিলেন আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা । আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তাঁদের নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত করেছেন । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

اللهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَئِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌة

 

 

 

 

অর্থ : “আল্লাহ তায়ালাই ফেরেশতাদের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকেও রাসুল মনোনীত করেন; আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা ।” (সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত ৭৫)

সুতরাং মনোনীত বান্দা হিসেবে নবি-রাসুলগণ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন । প্রথমত, তাঁরা ছিলেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাসী । সবধরনের কথায় ও কাজে তাঁরা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের অনুসরণ করতেন । আল্লাহ তায়ালার পূর্ণ আনুগত্যই ছিল তাঁদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ।

নবি-রাসুলগণ ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, সুবিবেচক ও বিচক্ষণ। তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ। তাঁরা সবধরনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র ছিলেন । স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁদের সকল প্রকার অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখতেন । হযরত ইউসুফ (আ.) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ নবি । তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 66 আমি তাঁকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ।” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ২৪)

নবি-রাসুলগণ ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী । সকল সৎগুণ তাঁরা অনুশীলন করতেন । তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত সৎ, সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ । দয়া, ক্ষমা, ধৈর্য ইত্যাদি সব ধরনের মানবিক গুণ তাঁদের চরিত্রে বিদ্যমান ছিল । মিথ্যা, প্রতারণা, পরনিন্দা, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি খারাপ স্বভাবের লেশমাত্র তাঁদের চরিত্রে কখনোই ছিল না । বরং তাঁরা ছিলেন সৎস্বভাবের জন্য মানবজাতির অনুপম আদর্শ ।

কর্তব্যনিষ্ঠা ও দায়িত্বপালনে নবি-রাসুলগণ ছিলেন অতুলনীয় । নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁরা বিন্দুমাত্র অলসতা ও উদাসীনতা প্রদর্শন করেননি । বরং এজন্য কাফিরদের বহু অত্যাচার ও নিপীড়ন ধৈর্যসহকারে সহ্য করেছেন । কিন্তু তারপরও তাঁরা যথাযথভাবে মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী পৌঁছিয়েছেন । তাঁরা ছিলেন নির্লোভ ও নিঃস্বার্থ। পার্থিব কোনো লাভের আশায় তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব থেকে কখনো পিছপা হননি । কাফিররা ইসলামের দাওয়াত প্রচার বন্ধ করার জন্য তাঁদের নানা প্রলোভন দেখাত । কিন্তু তাঁরা পার্থিব স্বার্থের কাছে মাথা নত করেননি ।

দীন প্রচারে নবি-রাসুলগণ ছিলেন ত্যাগের মূর্ত প্রতীক । বিনা দ্বিধায় পার্থিব আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস, ধন-সম্পদ তাঁরা আল্লাহর নির্দেশে ত্যাগ করতেন । দীন প্রচারের স্বার্থে প্রিয়নবি (স.) বাড়ি-ঘর, আত্মীয়- স্বজন, এমনকি নিজ দেশ মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেছিলেন । নবি-রাসুলগণের জীবনীতে ত্যাগের এরকম আরও অসংখ্য উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় । নবুয়তের ধারা

আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন । সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হযরত আদম (আ.), আর সর্বশেষ নবি ও রাসুল হলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)। এঁদের মাঝখানে আল্লাহ তায়ালা আরও বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন । নবি-রাসুলদের আগমনের এই ধারাবাহিকতাকেই নবুয়তের ক্রমধারা বলা হয় । দুনিয়াতে আগত সকল গোষ্ঠী বা জাতির জন্যই আল্লাহ তায়ালা নবি-রাসুল বা পথপ্রদর্শনকারী পাঠিয়েছেন ।

 

 

 

 

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍه

অর্থ : “আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই পথপ্রদর্শক রয়েছে ।” (সূরা আর-রাদ, আয়াত ৭)

তাঁরা মানুষকে এক আল্লাহ তায়ালার দিকে ডাকতেন । সত্য ও সুন্দর জীবনবিধান তথা আল্লাহর দীন অনুসরণের নির্দেশ দিতেন ।

সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত শরিয়ত তথা দীনের বিধি-বিধান এক রকম ছিল না। বরং মানবজাতির পরিবেশ, পরিস্থিতি, সভ্যতা-সংস্কৃতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন শরিয়ত দেওয়া হতো । নবি-রাসুলগণ তা মানবসমাজে বাস্তবায়ন করতেন। তবে সব নবি-রাসুলের দীনের মৌলিক কাঠামো ছিল এক ও অভিন্ন । আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ বা তাওহিদ ছিল সবারই প্রচারিত দীনের মূলকথা । হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে আগত সকল নবি-রাসুলই এ দীন প্রচার করেছেন । হযরত নূহ (আ.), হযরত ইবরাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.), হযরত দাউদ (আ.), হযরত ঈসা (আ.) সকলেই এই একই দীন ও শিক্ষা প্রচার করেছেন । আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন নবুয়তের ধারার সর্বশেষ নবি । তাঁর পরে আর কোনো নবি আসেননি, আসবেনও না । সুতরাং আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাধ্যমে দীনের পূর্ণতা প্রদান করেন । আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

অর্থ : “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম ।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩) এভাবে দীনের বিধি-বিধান পূর্ণতা প্রাপ্তির ফলে নবি-রাসুলগণের আগমনের ধারাও বন্ধ হয়ে যায় । ফলে নবুয়তের ধারাও পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় । মানুষের হিদায়াতের জন্য আগমনকারী এসব নবি-রাসুল সকলেই ছিলেন আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা । তাঁদের সকলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

أمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللهِ وَمَلَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ قف احَدٍ مِّن رُّسُلِهِ " 3

অর্থ : “রাসুল, তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ইমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। তাদের সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসুলগণে ইমান এনেছে । তারা বলে, আমরা তাঁর রাসুলগণের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৮৫)

নবুয়তের ধারায় আগমনকারী সব নবি-রাসুলকে বিশ্বাস করা ইমানের অপরিহার্য শর্ত । এঁদের কাউকে বিশ্বাস এবং কাউকে অবিশ্বাস করা যাবে না । বরং সকলকেই আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবি-রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে । নবি-রাসুল হিসেবে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। কারও প্রতিই কোনোরূপ ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা কটাক্ষ করা যাবে না ।

 

 

 

সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি

নবুয়তের ধারার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ছিলেন আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) । তিনি ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী । দুনিয়াতে আগমনকারী সব নবি-রাসুলই কোনো বিশেষ গোত্র, বিশেষ দেশ, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সারা বিশ্বের সকল স্থানের সকল মানুষের নবি । তিনি বিশ্বনবি । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

قُلْ يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا

অর্থ : “(হে নবি!) আপনি বলুন, হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্যই আল্লাহর রাসুল হিসেবে প্রেরিত ।” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত ১৫৮)

রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন সর্বকালের নবি । কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমন করবে সকলের নবি তিনিই । তাঁর শিক্ষা, আদর্শ ও আনীত কিতাব আল-কুরআন সকলকেই অনুসরণ করতে হবে । তিনি রহমতের নবি । মানবজাতির জন্য তিনি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত ও অনুগ্রহ স্বরূপ । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَمَا أَرْسَلْنَكَ إِلَّا رَحْمَةٌ لِلْعَلَمِينَ

অর্থ : “(হে নবি!) আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি ।” (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ১০৭)

অতএব, আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি । হযরত মুহাম্মদ (স.)- কে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হিসেবে বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি কর্তব্য ।

খতমে নবুয়তের অর্থ ও এতে বিশ্বাসের গুরুত্ব

হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বশেষ নবি । তাঁর মাধ্যমে দীনের পূর্ণতা ঘোষিত হয় এবং নবুয়তের ধারা সমাপ্ত হয় । তিনি নবি-রাসুলগণের ধারায় সর্বশেষে আগমন করেছেন । আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তাঁকে ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ তথা সর্বশেষ নবি বলে অভিহিত করেছেন ।

খাতামুন অর্থ শেষ, সমাপ্তি । আর নবুয়ত হলো নবিগণের দায়িত্ব । সুতরাং খতমে নবুয়তের অর্থ নবুয়তের সমাপ্তি । আর যার মাধ্যমে নবুয়তের ধারার সমাপ্তি ঘটে তিনি হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন বা সর্বশেষ নবি ।

আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। এঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম ছিলেন হযরত আদম (আ.)। আর সর্বশেষ ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)। হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর মাধ্যমে নবি-রাসুলগণের আগমনের ধারা শেষ বা বন্ধ হয়ে যায় । সুতরাং তিনিই সর্বশেষ নবি বা খাতামুন নাবিয়্যিন । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّنَ

 

 

অর্থ : “মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবি ।” (সূরা আল আহযাব, আয়াত ৪০ )

খাতামুন শব্দের অন্যতম অর্থ সিলমোহর । কোনো কিছুতে সিলমোহর তখন অঙ্কিত করা হয় যখন তা পূর্ণ হয়ে যায় । সিলমোহর লাগানোর পর তাতে কোনো কিছু প্রবেশ করানো যায় না । নবুয়তের সিলমোহর হলো নবুয়তের পরিসমাপ্তির ঘোষণা। নবুয়তের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি ঘোষণা । অর্থাৎ নতুনভাবে কোনো ব্যক্তি নবি হতে পারবে না এবং নবুয়তের ধারায় প্রবেশ করতে পারবে না । এটাই হলো খতমে নবুয়তের মূল কথা ।

আমাদের প্রিয় নবি (স.) হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন । তিনি সর্বশেষ নবি । তাঁর পরে আর কোনো নবি নেই । তাঁর পরে আজ পর্যন্ত কোনো নবি আসেননি । কিয়ামত পর্যন্ত আসবেনও না । তাঁর পরবর্তীতে যারা নবুয়ত দাবি করেছে তারা সবাই ভণ্ড, মিথ্যাবাদী ও প্রতারক । কেননা মহানবি (স.) বলেছেন,

أَنَا خَاتَمُ النَّبِينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي

অর্থ : “আমিই শেষ নবি । আমার পরে কোনো নবি নেই ।” (সহিহ মুসলিম)

অন্য একটি হাদিসে মহানবি (স.) বলেছেন- “অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে । তারা প্রত্যেকেই নবি হওয়ার দাবি করবে । অথচ আমিই সর্বশেষ নবি । আমার পর আর কোনো নবি আসবে না ।” (আবু দাউদ)

হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে খাতামুন নাবিয়্যিন হিসেবে বিশ্বাস করা ইমানের অন্যতম অঙ্গ । তাঁর পরবর্তীতে যারা নবি বলে দাবি করেছে সবাই মিথ্যাবাদী । আমরা তাদের নবি হিসেবে বিশ্বাস করব না । তাদের শিক্ষা, আদর্শ বর্জন করব।

আমরা জীবনের সর্বাবস্থায় মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করে চলব ।





Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.